Sunday, February 08, 2009

আসলে সে সব ছিল নিতান্তই বিনোদিনী বালিকা বিদ্যালয়

এমনি এমনি বাড়ি গেলাম। বিকেলে প্রতনুকে খুঁজতে এক রথের মেলার জনস্রোতে। দুইপাশে মানুষ সরে সরে যাচ্ছে, ভীড় এগোয় না, বিহ্বলতা বাড়ে। চারপাশে দড়িতে প্ল্যাস্টিকের পুতুল, বেলুনে-পিস্তলে বিবিধ জুয়ার উপকরণ। আর সারা ভীড় জুড়ে আমার এক পরিচিত কিশোরী গন্ধ।

গন্ধটা ফিরে এল আবার। প্রতনু এই ঘরে পড়ায়, এখন কেবল রবি। একঝাঁক পিচ্চি।১১-১২ ক্লাস, তারপর কিছুতেই পড়াতে রাজি হয় না সে। অনার্স পড়ানো ভারী ঝক্কির! তবু তাদের সকলের সাথেই যোগাযোগ থাকে, ওই ঘরেই। সারা সপ্তাহ সে থাকে মুর্শিদাবাদে। ওখানকার একটা কলেজে সে পড়ায়। রবিবার চুঁচুড়ায়। ব্যাচের পর ব্যাচ, কিশোরী গন্ধ।

আমি নতুন কিছু লিখলে রবিবার যাই, শোনাতে সেই গন্ধে বসে পড়ি, পাতা উল্টাই, আর শীতল বোধ করি। পিচ্চিদের অনেককেই আমি চিনি, ছোট শহরে যা হয়। এখনো নাকি তারা সকলেই আমাকে চেনে। ওই ঘরে আটকানো আমার আঁকা এক বিশাল ক্যানভাসের সূত্রে।

মেলায় দাঁড়িয়ে আমি পুতুল খুঁজি, আর কাঠের কাজ, তালপাতার সেলাই। পাইনা। রঙিন ছিটকাপড় মেলানো আসন কিনি কেয়েকটা। আর চারপাশে সব যেন চেনা মুখ দেখি। পিচ্চি মেয়েগুলো মেলায় এসেছে তাদের পিচ্চি কোলে নিয়ে। এরা কিছুতেই গন্ধটা হারাতে চায়নি। আমার মজা লাগে।

বারদুয়েক গেছি স্কুলটায়, ঘুটেবাজার ছাড়িয়ে। অভিজিত বারুইদের বাড়ি ছিল ঠিক গায়ে গায়ে। গেছি। কুট্টিকে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছি কয়েকবার, সাইকেলের রড তা মনে রাখলেও রাখতে পারে। আসলে কাদার মত নীল রং আর সাদা ব্লাউজের কেমন জানি একটা গন্ধ আছে, নেলপালিশের মত। সারা রথতলা জুড়ে আছে গন্ধটা, কিশোরীদের দ্বিপ্রাহরিক হৈচৈ, আর বিনোদিনী বালিকা বিদ্যালয় ছুটি হয়ে যাওয়ার পর থেকে যেভাবে নীল হয়ে যায় রাস্তা ঘাট, আর কিছু প্রাইভেট টিউটরের ১৪ বাই ১২ তা ঠিক মত দেখা হয়ে উঠলনা কোন দিন, একটু আপসোস হয়।

আমি মাঝেমাঝে ছেলেবেলায় যাই। হাতদিয়ে ছুঁয়ে-টুঁয়ে দেখি সব ঠিকঠাক আছে কি না। আসলে সে রকম সময় এলে তুলোরা ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে, উড়ে উড়ে যায়। যেন একেকটা খালি নীল-সাদা ট্রেন উড়ে যাচ্ছে পাশ দিয়ে, দেল প্যালাইডুয়ার স্টেশনের মত। আকাশে দূর জেটপ্লেনের রেখা আমি আর এখন তাকিয়ে দেখিনা, সব নীল-সাদা একই গন্ধে সাদা-মাটা হয়ে পড়ে ছেলেবেলায় পৌঁছে গেলে।