Sunday, March 28, 2010

যদি ভাব তোমার কথাই বলছি আমি

ইউরোপের লেনা আমাদের সঙ্গে একটা খেলা খেলতে চাইছিল, শেষে ফুলের নাম গিয়ে দাঁড়ায় মানুষের নামে। ঐশ্বর্য রাই এলেন, লাদেন থকে হিটলার, সুপার ম্যান, ই-স্পাইডারম্যান, নেপোলিয়ান বোনাপার্ট সব্বাই থাকলেন। মাহবুব খেলতে একেবারেই রাজী হচ্ছিল না, মদ ছিল রেডি,কেবল গোস্ত নয়, ধানমন্ডি ১৯ তাই আমার ছুটি। এটা বেশ কয়েকমাস আগের কথা তখন প্রচন্ড গরম, ফুলের আরামপ্রদ নাম হাস্নুহেনা, চাঁপা কোনটারই তো ইংরাজি নাম জানি না। লিপি আর মাহবুবের ও যুক্তি ছিল সেই রকম। ছোটবেলায় আমরা আরেকটা খেলা খেলতাম, ৫ জন ৫টা ফুলের নাম লিখে মেলাতাম, কখনও জন্তু, কখনও শহর। কাটা যেত একই নাম দুইজনে লিখলে। অপর্ণা সেনের মত ঘেটু চট করে কেউ লিখত না, গোলাপের বাগানই থাকত আমাদের সামনে বলাই বাহুল্য। আমি ঘেটু ও অপর্ণা দুজনকেই খুব পছন্দ করতাম কিন্তু লিখতাম বকফুল বা কল্কে। খুব খুব ছোট বয়েসটায় আমি সত্যই কল্কে ফুলে মুগদ্ধ ছিলাম। কুড়িয়ে কানে গুজতাম, হলুদ সাদা আর কমলার ভেতর হলুদটা ছিল আমার কাছে ইয়ের মত প্রিয়, ইনভল্যুন্টারিতে মনে হচ্ছে মালা-টালাও গেঁথেছি। ধুতরা যেন এরই মেগা ভার্শন, টিকোমা ছোটভাই। কিন্তু কল্কের মত গন্ধ আর কিছুতেই পাইনি, নতুন বই ছাড়া।

আমাদের ই-স্কুলে নানা রকম ফুল পড়ে থাকত। ঢুকেই ছিল বকুল। আমি কখনও বকুল কুড়াইনি। রবীন্দ্রনাথ দায়ী কি না জানিনা, কুড়াইনি। কেস্টোচুড়ার কুড়ি ছাড়িয়ে প্যাঁচ খেলা সে ছিল বেহেস্তের একটা বিনোদন। রাধাচুড়াকে ফুল বলে ভাবিইনি, কিরকম মধু ছড়ানো মৌময়আলো জড়ানো সব। ছিঁড়ে মধু চুসতাম রঙ্গন, ফুলে মুখ দিলেই কেমন যানি সেই সময় ঝিনুকদির কথা মনে হত। ইস্কুল ডেরেসে ইক্কেরে রঙ্গন ফুল দেখতে সে, মাত্তর এক কেলাস উঁচুতে পড়ত, ক্যুইজ-টুইজের রাস্তায় রোজ ক্ষারাক্ষরি হত, নো নিটফল , প্রত্যেক কম্পিটিশনে তাকে বলে বলে হারাই, প্রেম করল বাংলার মাস্টর ঐ হাবলাটাকে। ছো: রঙ্গন ফুল কোনদিনই আমার পছন্দ নয়, বিষ। বিষ।

আজকাল ধানমন্ডি শেখের বাড়ি ছাড়িয়ে হাঁটি আর বকুল দেখি। ঝরে আছে। তুমি ঠিক কি ফুল ভাল বাস আমি জানি না। তবে নিশ্চয়ই তার রঙ সাদা। আমি বকুল দেখি কেবল নয়। গুনিও। দু-একজন রিক্সাওয়ালাই নোটিশ করে কেবল, করুক। যথারিতি কুড়াই না। আজ শেখের মেগা ইভেন্ট। ৩২ ঝকঝকে তকতকে। বাড়ির সামনে রাখা সব ফুলের সামনে সেলোটেপে চিপকানো নামের সিরিয়াল। বেশ কয়েকটা গোলাপবাগান আছে নির্ঘাত, গুনি নাই। গোলাপের কথা মনে হতেই পিপড়েদের কথা মনে পড়ল, আয় পিপড়ে ঝেঁপে, শোক দিস মেপে। যা ভেবেসিলাম, একটাও বকুল নাই, রিকশাও নাই যথাস্থানে। গাছ তলায় দাড়িয়ে ডাকলাম, আয় তো আমার বকুল ফুল, নো রিপ্লাই। মালিনী কেবল অন্ধ নয়, কানেও শোনে না মনে হল, অমিত খচলে খচুক, সত্যি কথাই বলা ভাল।

পুজোর আগে টো টো করে ঘোরায় এখন ছেদ পড়েছে। টিলিভিশনের কাজ করিনা তো এখন। বৃষ্টিতে ছিন্নভিন্ন কাশফুলের চাইতেও তাই মিস করি দিঘি ভরা পদ্ম, বেশিরভাগই পদ্মিনীর মত গোলাপি। আর একরাশ ফড়িং ফড়িং ছেলেবেলা। বর্ধমান বা বীরভূম গেলেই ঠিক খুঁজে বার করতাম, সারা রাস্তা শুনতে শুনতে যেতাম, এখন আর পাওয়াই যায় না! যখন আকাশের তলায় ওমন একটা দিঘি পেতাম, তখন মনে হত আমি ইচ্ছা করলেই পরীক্ষায় ফার্স্ট হতে পারতাম, না আমি কোনো দিন হইনি, চাইওনি। পদ্মদিঘির পাড়ে, কখনও বা ইষৎ হাড়িয়ায় ভাসতে ভাসতে মনে-প্রাণে চাইতাম একটা জলপরীকে, মনে হত একদিন কোন এক পদ্মফুলের ভেতর থেকেই উঠে আসবে সে।